হায়দার আলীঃ কর্মরত বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দখলে শিবগঞ্জ আল-মদীনা ইসলামী হাসপাতাল।রুগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হতে না হতেই প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাটানি আর ছবি তোলা শুরু করেন তারা। কোনরকম অনুমতি না নিয়েই হাত থেকে কেড়ে নেন রোগীর ব্যবস্থাপত্র। বেশ কয়েক মাস ধরে শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালে এমন অবস্থা লক্ষ করা গেছে। এছাড়া শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কোন রোগীর প্রেসক্রিপশন নিয়ে ছবি উঠাতে পারবেন না। তবে তারা এ বিষয়টিকে কোনভাবে কর্ণপাত করছেন না। অনুসন্ধানে গিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চলছে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের এমন উপদ্রব। এতে বিব্রতবোধ করছেন রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজনরা। শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে প্রতি শুক্রবার ছুটে আসেন হাজার হাজার রোগী। কিন্তু রোগী দেখার সময় ওই ঔষধ প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের কক্ষে ঢুকে তাদের কোম্পানীর ঔষধ সম্পর্কে লেকচার দিয়ে সময় নষ্ট করে। এদিকে অসহায় রোগী ও তাদের স্বজনরা বাইরে ঠায় দাড়িয়ে থাকেন সিরিয়ালের জন্য। তারপর সিরিয়াল পেয়ে যখন রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাইরে বের হন তখনই কোনরকম অনুমতি না নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের হাত থেকে কেড়ে নেন ব্যবস্থাপত্র। তারপর একাধিক ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা শুরু করেন পালাক্রমে ছবি তোলা। শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালে ঢুকলে মনে হয় চিকিৎসা নিতে রোগী এবং রোগীর স্বজনরা জিম্মি হয়ে পড়েছে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের কাছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতি শুক্রবার ইনসেপটা, এ্যারিষ্টোফার্মা, অপসোনিন, বেক্সিমকো, স্কয়ার, রেনেটা, এসকেএফ, একমিসহ বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা সকাল থেকে ভিড় করে প্রতিটি বিভাগের ডাক্তারদের কক্ষের সামনে ও হাসপাতালের গেটে। পদোন্নতি ও চাকুরী বাঁচানোর জন্য দিনের পর দিন তারা এহেন কর্মকান্ড করেই চলেছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের জিজ্ঞেস করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, পদোন্নতি এবং ঔষধ কোম্পানীর টার্গেট পূরণ করতেই রোগীর কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নিশ্চিত হতে চান কোন কোন কোম্পানীর ঔষধ লেখা হয়েছে। নিজের পদোন্নতি এবং চাকরি টিকিয়ে রাখতেই তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন। তারা আরো বলেন, তাদের কোম্পানীর ঔষধ লেখার কারণে ডাক্তারদের প্রতিমাসে কোম্পানীর পক্ষ থেকে বিশেষ উপহার দেয়া হয়। যে ডাক্তার যত বেশি ঔষধ লেখেন, তাদেরকে বেশি উপহার দেয়া হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ডাক্তার দেখিয়ে বের হতেই রোগী মুস্তারির কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেন বেশ কয়েকজন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধি। এতে মুস্তারি বিরক্ত হলেও তখন কিছু বলেননি। কিন্তু পরক্ষণেই তিনি ‘এদের অত্যাচারে ডাক্তারও ঠিকমতো দেখাতে পারি না’ বলতে বলতে চলে যায়। শিবগঞ্জ দুর্লভপুর গ্রামের সামিম বিশ্বাস রকি নামের এক রোগী বলেন, চিকিৎসা নিতে এসে ঔষধ কোম্পানীর লোকসহ অনেক দালালের হাতে পড়তে হচ্ছে। তারা পঙ্কপালের মতো এসে আমাকে ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে ছবি তুলতে শুরু করে। ছবি তোলার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন ‘এটা আমাদের ডিউটি। ছবি না তুললে আমাদের চাকরি থাকবে না। শুধু মুস্তারি বা সামিম বিশ্বাস রকি নয় শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীদের সাথে এ রকম ব্যবহার করছেন তারা। এটা রোগীদের জন্য খুবই বিরক্তিকর এবং মানষিক ভোগান্তি। এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ আল-মদিনা হাসপাতালের এক কর্মচারীকে এই ভোগান্তির কথা জিজ্ঞেস করলে সে তার উত্তরে বলে আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না সবকিছু ডাক্তারগণরা জানে। তবে শিবগঞ্জ আল-মদীনা হাসপাতালের কর্মচারী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটা আমার একার দায়িত্ব না। ডাক্তাররা যদি ঢুকার সুযোগ না দেন তবে তারা ঢুকার সাহস পাবেনা।